
উত্তম কুমারের হেয়ার স্টাইলের ফলো করে নিজের চুলের ছাঁট দিয়েছেন কারা? তাঁর শার্টের কলার কেমন ধাঁচের ,তাঁর স্যুটের কাট—সবই অনুকরণ করতেন কে কে? কার ছবি দেখে সবাই বলতো- ‘দেখতে লাগছে উত্তম কুমার এর মতো’। সিনেমার পর্দায় নায়ক উত্তম কুমারকে দেখে যারা উত্তম কুমারের স্টাইল ফলো করে ছবি তুলতেন, আজকের এই দিনে মহানায়কের জন্মদিনে আসুন দেখি সেই ছবিগুলো কেমন আছে? ঢাকা বা কলকাতার সেলুনে এখন হয়তো ‘উত্তম ছাঁটে’র বিজ্ঞাপন নেই। আপনার ঘরে যদি থাকে ‘উত্তম ছাঁট’ এর কোনো ছবি, তা আজকেই ফ্রেমে বাঁধাই করুন। ঠোঁটের কোণে সিগারেট ধরানো ছবি কিংবা গভীর চোখে প্রেমিকার দিকে লুক দেওয়ার ভঙ্গিতে তোলা আগের সেই ছবি যদি থাকে আপনার ঘরে, যুবক বয়সের এই একটি ছবির কারণেই নতুন প্রজন্মের কাছে আপনার স্টাইলের পরিচয়টি প্রকাশ করবে। এটি এখন আর শুধু উত্তম কুমার এর স্টাইল থাকবে না, হয়ে যাবে আপনার স্টাইল।

রোমান্টিকতায় ভরপুর উত্তম-সুচিত্রা জুটি বাঙালিদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রেম করতে হয়।
বাংলা ছবির চিরকালীন জুটি উত্তম সুচিত্রা। জুটি বেঁধে তাঁরা বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন ৩০টিরও বেশি ছবি। যার প্রায় সবগুলোই বক্সঅফিসে ‘সুপারহিট’। পঞ্চাশ,ষাট ও সত্তর—এই তিন দশক রুপালি পর্দায় তো ছিলেনই, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও ডিভিডি-ওয়েবেও উত্তম-সুচিত্রা জুটি জনপ্রিয় পরের প্রজন্মের কাছেও। রোমান্টিকতায় ভরপুর এ জুটি বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে ভালোবাসতে হয়। তাই তাঁদের বাংলা ছবির ফার্স্ট কাপল বললে ভুল হয় না।
উত্তম-সুচিত্রা জুটি রুপোলি পর্দার এমনই এক প্রেমিক-যুগল, যা চিরদিনের। এই জুটির পঞ্চাশের দশকের ছবির একটি রোমান্টিক দৃশ্য দেখলেও আজকের প্রেমিক হৃদয় উথাল পাতাল করে ওঠে। তাঁদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটি সংলাপ কালোত্তীর্ণ। তাই তাঁরা কিংবদন্তি।


এমন একটি রোমান্টিক জুটির জন্যই যেন গালে হাত দিয়ে বসেছিলেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। এর পরেই বোঝা গিয়েছিল যে বাংলা ছবির নতুন ‘টনিক’ এসে গিয়েছে। এর পর পথে হলো দেরী, মরণের পর, শাপমোচন, শিল্পী, সাগরিকা, হারানো সুর, সবার উপরে, সূর্যতোরণ, চাওয়া-পাওয়া, সপ্তপদী, জীবনতৃষ্ণা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, ইন্দ্রাণী, চন্দ্রনাথ, আলো আমার আলোর মতো অন্তত ৩০টির বেশি ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন এই জুটি। উত্তম-সুচিত্রা বাংলা সিনেমায় রোমান্টিসিজমের ধারাটাই পাল্টে দেন। দশকের পর দশক ধরে হয়ে ওঠেন বাঙালির চিরকালীন এক আইকন।
উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম হিট ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া হাসির এ ছবিটিতে উত্তম কুমার অথবা সুচিত্রা সেন কেউই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। এমনকি এই ছবিটি যখন রিলিজ হয়, তখন পোস্টারে উত্তম-সুচিত্রার কোনো ছবিও ছিল না। ছবির প্রযোজক ও ডিস্ট্রিবিউটাররা সেই সময়ের বিখ্যাত চরিত্রাভিনেতা তুলসী চক্রবর্ত্তীকে পোস্টারের প্রধান মুখ বানিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক অভিনয় বাংলা সিনেমায় প্রথম নজরে পড়ে দর্শকদের।


রোমান্টিক জুটি হিসেবে উত্তম-সুচিত্রা নিজেদের নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। জনপ্রিয়তার এমন একটি স্তরে তাঁরা ছিলেন যে সবকিছুই অনুকরণ করতেন অনুরাগীরা। সুচিত্রার পোশাক অনুকরণ করতেন সেইসময়ের মহিলারা। তাঁর শাড়ি পরা কিংবা চুল বাঁধার স্টাইল ছিল পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি সমাজে অভিজাত্য ও ফ্যাশন-সচেতনতার প্রতীক ছিল। অনেকেই সুচিত্রার মুখের আঁকা তিল অনুকরণ করতেন। লিপ মেকআপ অনুকরণ করাও সেই সময়ে হয়ে উঠেছিল এক স্টাইল স্টেটমেন্ট।