
আলোকচিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদার। জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর। ডাক নাম কাঞ্চন। যৌবনে গোটা রাজশাহীতে পরিচিত ছিলেন ‘প্রিন্স রশীদ’ নামে। ঊনসত্তর এর গণঅভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র ধারণ করার জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করেছেন। ১৯৫৯ সালে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে পিআইডি বা প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। পেশা হিসেবে ফটো সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন রশীদ তালুকদার। সে লক্ষ্যে, দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ফটো সাংবাদিক বা আলোকচিত্রী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ১৯৬২ সালে। ফটো সাংবাদিক হিসেবে তাকে জীবনের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টটি দিয়েছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার। ১৯৭৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগ দেন। সেখানে একাধারে ২৯ বছর চাকরি করে ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে তার আলোকচিত্র। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাদার তেরেসা, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের স্থিরচিত্র ধারণ করে রশীদ তালুকদার স্মরণীয় হয়ে আছেন। ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে শহীদ আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ফুটে উঠেছিল ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে টোকাই বা পথশিশুর ছবি তুলে সবার নজর কাড়েন তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভ‚মি থেকে বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের ছবিও তিনিই ধারণ করেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনকেও ক্যামেরায় ধারণ করেন রশীদ তালুকদার। ৭২ বছর বয়সে ২৫ অক্টোবর, ২০১১ তিনি মারা যান।